সাদা মেঘের মিলনে সত্যিই কি প্রাণীর অবয়ব নাকি সম্পূর্ণ একটি ধোঁকা

সাদা মেঘের মিলনে সত্যিই কি প্রাণীর অবয়ব নাকি সম্পূর্ণ একটি ধোঁকা

আকাশের সাদা মেঘের দিকে তাকিয়ে কখনও কোনো পাখির অবয়ব দেখেছেন?

কখনও বা রাতে ঘুমানোর সময় আলনায় সাজিয়ে রাখা আপনার টি-শার্ট টি দেখে ভুত মনে করে চিৎকার করেছেন?

মজার বিষয় হলো,২০০৪ সালে, মিয়ামির ডায়ানা ডুসার একটি ১০ ​​বছর বয়সী গ্রিলড পনির স্যান্ডউইচ ইবেতে ২৮,০০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে এটি যিশু খ্রিস্টের চিত্র বহন করে।

Image credit: BBC

আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো খাবারের মধ্যে, গাছের টুকরার মধ্যে আল্লাহ লিখা,  হিন্দু ধর্মীয় গণেশ, যীশু বা ভার্জিন মেরির অবয়ব দেখা যায়। আর এসব বিষয় সবচেয়ে বেশি হাইপড হয়।

এ ছবিটার দিকে লক্ষ করুন, দেখে চোখ মনে হচ্ছেনা এমন লোকের সংখ্যা খুব ই কম। যদি বলি এটি চোখ না!!!

জ্বি,এটি আসলেই চোখ না, এটি মূলত বেসিনের টিউব দিয়ে সাবান পানি নিচে চলে যাচ্ছে।

আকাশের সাদা মেঘের মাঝে কোনো কিছুর অবয়ব খুঁজে পাওয়া, খাবারের মাঝে গণেশ-যীশু এবং ছবিটি দেখে চোখ মনে হওয়া এ সবকিছুই ঘটে প্যারিডোলিয়ার কারণে। প্যারিডোলিয়া হলো মানব মনের একটি প্রবণতা, যা তুচ্ছ উদ্দীপনাকে অর্থপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করে।

প্যারিডোলিয়ার একটি বিখ্যাত পরীক্ষা হলো, রর্শাচ ইংকব্লট পরীক্ষা।  কাউকে যদি এ ছবিটির মতো এলোমেলো কালি দিয়ে কোনো চিত্র দেখানো হয় তাহলে বেশিভাগ মানুষের মন্তব্য হবে এমন-

“আমি একটি এলিয়েনকে দেখতে পাচ্ছি যার চোখ বড় বড় কালো, তার বাহু উঁচু করে ধরে আছে এবং মাথা থেকে পিঙ্গল বেরোচ্ছে।”

মানবমন সবসময় ই সৃজনশীল।  তাই যেকোনো কিছুর মাঝে এরকম অবয়ব খুঁজে বেড়ানো তাদের কাছে আনন্দের। যখন আমরা গাছের গায়ে, দরজার কাঠে, মেঘের মিলনে ও তারাদের মাঝে পছন্দ-অপছন্দের অবয়ব খুঁজে পাই তখন মনে হয় এগুলো বোধ হয় প্রকৃতির ই সৃষ্টি কিন্তু এটা আসলে একধরনের ধোঁকা বলা চলে।

আরেকধরনের প্যারিডোলিয়া ঘটে যখন মানুষ কিছু এলোমেলো শব্দের মাঝে কিছু অর্থ বের করে যদিও ওই শব্দের কোনো অর্থই নেয়। বর্তমান ফেসবুক যুগে ফেসবুকে বেশ কিছু ভিডিও দেখা যায় যেখানে আমাদের  কিছু এলোমেলো শব্দ শুনতে দিয়ে বলে “আপনি কি এটা শুনতে পাচ্ছেন? আমি এই এই শব্দ গুলো শুনতে পাচ্ছি।” এমন ভিডিও নিউজফিডে প্রায় সকলের ই এসেছে। যখন আমাদের কেউ কোনো শব্দের অর্থ জোড়া লাগিয়ে উল্লেখ করে তখন ওই শব্দগুচ্ছ শুনার সময় আমাদের মনে বারবার ওই শব্দগুলোকে অর্থবহুল হয়ে বেজে উঠে। আর ঠিক এই বিষয়টি-ই হলো অডিওটোরি প্যারিডোলিয়া।

আবার কখনও দেখা যায়, মানুষ ইলেকট্রিক সকেট অথবা সকালের নাস্তায় খেতে বসে রুটিতে কোনো মুখের অবয়ব দেখতে পায়, এটিও এক ধরনের প্যারিডোলিয়া। যা মূলত ফেইস প্যারিডোলিয়া নামে পরিচিত।

প্যারিডোলিয়া আসলে কেন ঘটে এর কোনো সঠিক উত্তর এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে প্যারিডোলিয়া মানুষের মস্তিষ্কে খুব দ্রুত ঘটে। প্রায় কয়েকশো মিলিসেকেন্ডের মধ্যে।

লেখকঃ জেরিন সুলতানা শাওন

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Reference:

1.https://www.theguardian.com/australia-news/2021/jul/07/so-happy-to-see-you-our-brains-respond-emotionally-to-faces-we-find-in-inanimate-objects-study-reveals

2.https://psychologenie.com/pareidolia-explained-with-examples

3.https://www.technologynetworks.com/neuroscience/news/why-our-brains-see-faces-everywhere-350616

4.https://owlcation.com/stem/Pareidolia-Explained

Share:

Facebook
LinkedIn
WhatsApp

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

On Key

Related Posts

Writing Research Paper With Latex

Why to use LaTeX?

Making the one around you use LaTex or convince a colleague to move where you can write up your whole document in word is a

Total Differentiation explained in bangla.

TOTAL DIFFERENTIATION শব্দটি প্রথম শোনার পর মনে হতে পারে অনেক জটিল কিছু।আজকে আমরা বিষয়টিকে খুবি সহজভাবে বুঝার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।Total Differentiation কে আমরা দুইভাগে আলোচনা

মার্কেটিং এর শুরুতে ‘ঠিক বেঠিক মার্কেটিং’

বইঃ ঠিক বেঠিক মার্কেটিং লেখকঃ গালিব বিন মোহাম্মদ  প্রকাশনীঃ আদর্শ রেটিংঃ৮/১০ আপনিও যদি মার্কেটিং জগতে নতুন প্রবেশ করতে চান তাহলে “ঠিক বেঠিক মার্কেটিং” বইটি আপনার