অসংখ্য বেলুন, রঙিন কাগজে বানানো ফুল দিয়ে সাজানো বাড়ি, চারদিকে বাচ্চাদের দৌঁড়াদৌঁড়ি। বাড়ি ভর্তি মেহমানের সাথে পালন হচ্ছে ফারিন এর চতুর্থ জন্মদিন। দাদা-দাদী, নানা-নানির কোলে হেসে খেলে আজ ৪ বছরে পা দিলো বাড়ির একমাত্র মেয়ে ফারিন।
জন্মদিনের পার্টি শেষে রাতে অধীর আগ্রহে বসে মা-বাবা ও মেয়ে জন্মদিনের সকল উপহার দেখতে লাগলো। লাল রঙ্গের একটি আকর্ষণীয় বাক্সের উপরে অনেক সুন্দর ফিতা দিয়ে বাঁধা এবং লেখা আছে “শুভ জন্মদিন ফারিন” যা দেখে ফারিনের আম্মু আব্বু অধীর আগ্রহে বক্সটি খুলে দেখতে পেলো গোলাপী রঙের পোশাক, রেশমী চুল এবং মায়াবী চোখের একটি সুন্দর পুতুল। পুতুলটি হাতে নিয়ে মেয়ের কাছে নিতেই ফারিন কান্না শুরু করে দিল এবং বারবার পুতুলটি থেকে সে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে মতো করছে। ফারিনের এধরনের উত্তেজনা দেখে মা-বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লো, বুঝে উঠতে পারছিলোনা, মেয়ে এমন করছে কেনো?
Referrence : https://images.app.goo.gl/Csn6vYJSJJYog7Mm7
এত সুন্দর পুতুল দেখে যেখানে অন্য মেয়েরা খুশি হয়ে খেলা করে যা শিশুর কল্পনা এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করবে সেখানে ফারিন এর এমন উত্তেজনা, দম বন্ধ হয়ে আসা, চিৎকার করা, পালানোর চেষ্টা করা কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরণ মা-বাবার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফারিনের এ বিষেশ আচরণ আসলে এক ধরনের ফোবিয়া (আতঙ্ক বা ভয়), যাকে পেডিয়োফোবিয়া (পুতুলের ভয়) নামে পরিচিত। এধরনের মানসিক রোগী সাধারণত হিউম্যানওয়েড (মানবের আকৃতির মত দেখতে বা রোবটিক চিত্র) দেখে ভয় পায়। পেডিয়োফোবিয়া হলো মূলত পুতুলের প্রতি অযোক্তিক, অনিয়ন্ত্রিত এবং অবিরাম ভয়। পেডিয়োফোবিয়া শব্দটি গ্রীক শব্দ ‘পেইডিয়ন’ এবং ‘ফোবস’ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘ছোট শিশু’ এবং ‘ভয়’।
Reference :https://images.app.goo.gl/x4Q9BW4sN3n6wmGB9
পেডিয়োফোবস এর মধ্যেও আবার কিছু ভিন্নতা রয়েছে, কিছু কিছু পেডিয়োফোবস সব ধরনের পুতুলকে ভয় পায়। আবার কিছু পেডিয়োফোবস বিশেষ ধরনের পুতুল যেমন হাঁটা-চলা করতে পারে এমন পুতুল, চীনামাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, ডুডু পুতুল, স্টাফড পুতুল ইত্যাদিতে ভয় পায়। পেডিয়োফোবিয়া শৈশবকালে হয়ে থাকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও থাকতে পারে।
হঠাৎ করেই পেডিয়োফোবিয়া দেখা যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে :
১. কিছু হরর (Horror) মুভি যেখানে পুতুলকে মন্দ বা ভিলেন হিসেবে দেখানো হয় যা মূলত মানুষের ক্ষতি করে থাকে, এধরনের মুভি দেখার কারণে পেডিয়োফোবিয়া হতে পারে। যার কারণে পেডিয়োফোবস ব্যক্তি মনে করে যে পুতুল তার ক্ষতি করতে পারে, ঘুমানোর সময় এটি তার শ্বাসরোধ করতে পারে।
২. পেডিয়োফোবিয়া সম্ভবত অতীতে ঘটে যাওয়া নেতিবাচক কোনো ঘটনা যা পুতুলের সাথে সংযুক্ত এমন ঘটনার কারণেও হতে পারে। নাজুক মন সেই ঘটনার সূত্র ধরে পুতুলকে মনের মধ্যে গেঁথে রাখে। এ কারণে পেডিয়োফোবিয়ার কারণ সমূহকে বিখ্যাত সিগমন্ড ফ্রয়েড “ভূল শৈশব” বলে অভিহিত করেছেন।
৩. রাতে দাদুর কাছে ভূতের গল্প শুনতে শুনতে পুতুলের প্রতি ভয়টা আসতে পারে।
৪. ভাই-বোনদের দ্বারাও অজান্তেই ছোট বাচ্চাদের মনে পুতুলের প্রতি এ ভয় জাগতে পারে।
Reference : https://images.app.goo.gl/hkdMcPGPYh1txZiM6
পেডিয়োফোবস এ আক্রান্ত ব্যক্তি কখনও কখনও মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এর কারণে একজন পেডিয়োফোবস ব্যক্তি হার্ট-এটাক পর্যন্ত করতে পারে। এ ফোবিয়াটির কারণে দীর্ঘদিনের মানসিক দুশ্চিন্তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকলাপের ব্যাঘাত ঘঠাতে পারে। এখনও অনেকেই পুতুলের ভয় মনে নিয়ে বাস করে। পেডিয়োফোবিয়ার চিকিৎসা করা না হলে ব্যক্তি শুধুমাত্র ঘরের কোণেই নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারে এবং নিজেকে ঘরের মধ্যেই গুটিয়ে রাখতে পারে।
পেডিয়োফোবিয়া প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও বিদ্যমান থাকলে পেডিয়োফোবিয়ার চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা যেতে পারে। পেডিয়োফোবিয়া কাটিয়ে উঠার ২টি জনপ্রিয় উপায় হলো হিপনোসিস এবং ডিসেনসিটাইজেসন। পেডিয়োফোবিয়ার চিকিৎসা কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা পরিবারের সহায়তায় করলেই ভালো হয়। এতে পেডিয়োফোবস ব্যক্তি মানসিক সহয়তা পেতে পারে।
লেখকঃ জেরিন সুলতানা শাওন
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ,
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Responses