“নোভা ইফেক্ট”-এ প্রভাবিত না হয়ে, খারাপ এর মধ্যে ভালো খুঁজেছেন কখনো?

এক সন্ধ্যায় এরিক তার প্রিয় কুকুর নোভা কে নিয়ে পার্কে হাঁটতে গেলো। তারা অনেক মজা করলো। কিন্তু হঠাই একটি খরগোশ দেখে নোভা খরগোশের পিছনে পিছনে ছুটতে লাগলো। এরিকের অনেক চেষ্টার পরও সে নোভাকে থামাতে পারলো না। এক সময়ে এরিক তার প্রিয় কুকুর নোভাকে হারিয়ে ফেলে। সে নোভাকে অনেক খুঁজলো। সে তার আশেপাশের মানুষ, প্রতিবেশী, পুলিশ সবাইকে জানিয়ে রাখলো।

এতটুকুতেই এরিক থেমে থাকে নি। সে বিভিন্ন নিউজপেপারেও কুকুর হারানোর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাখলো। অনেকদিন হয়ে গেলো এরিক এখনও নোভাকে ফিরে পেলো না। সে নোভাকে হারানোর পিছনে নিজেকে দায়ী করতে থাকলো। ভাবতে লাগলো নিজ হাত থেকে ছেড়ে দেওয়ায় সে তার প্রিয় নোভাকে হারিয়ে ফেলেছে। এক সপ্তাহ হয়ে গেলো, নোভাকে ফিরে পাওয়ার সকল আশা ছেড়ে দিয়েছে এরিক। এমন সময় হঠাৎ একদিন তার দরজায় কেউ এসে কলিংবেল বাজাল। দরজা খুলতেই দেখতে পেলো-নোভা।  নোভাকে নিয়ে এলো একটি মেয়ে যার নাম ভেনেসা। হারানো নোভাকে ফিরে পেলো এরিক। এরিক যে কি খুশি। 

ভেনেসার সাথে নোভার পরিচয় হলো এবং আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। যে এরিকই মনে মনে একসময় নোভাকে হারিয়ে নিজেকে দোষারোপ করতো সেই কিনা এখন ভাবে নোভা হারিয়ে যাওয়াটা আসলে ভালোয় হয়েছে। নোভার হারিয়ে যাওয়ার কারণে সে এখন ভেনেসাকে পেয়েছে। 

একদিন ভেনেসা এরিককে তার পরিবারের সকলের সাথে দেখা করানোর জন্য বাসায় দাওয়াত দিলো। এরিক স্যুট টাই পড়ে তৈরি হয়ে নিলো এবং ফুলের দোকান থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে রওনা দিলো ভেনেসার বাসার দিকে। হঠাৎ এক ট্রাকের ধাক্কায় এরিকের গাড়ির ধ্বংসাত্মক দূর্ঘটনা ঘটলো, সিটবেল্ট এ এরিক ভাঙ্গা হাঁড় নিয়ে অজ্ঞান হয়ে আছে। 

অনেকদিন পর এক হাসপাতালে এরিকের জ্ঞান এলো এবং সে ভাবতে লাগলো “আমার সাথেই কেনো এমনটা হয়?” তার মাথায় বারবার নোভার হারিয়ে যাওয়া ঘটনাটি ঘুরতে লাগলো এবং সে ভাবতে লাগলো নোভার হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার সাথে এমনটা হচ্ছে। 

এমতাবস্থায় ডাক্তার দেখলো এরিকের জ্ঞান এসেছে এবং সে এরিকের সাথে কথা বলতে লাগলো। ডাক্তার এরিককে বললো, “তোমার জন্য একটি ভালো খবর ও একটি খারাপ খবর আছে, তুমি প্রথমে কোনটি শুনবে?” এরিক বললো, সে প্রথমে খারাপ খবরটি শুনতে চায়। ডাক্তার এরিককে বললো, “আমরা তোমার ব্রেন এ টিউমার এর সূচনা খুঁজে পেয়েছি, আর ভালো খবর হলো দূর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো তোমার এ ব্রেন টিউমার তোমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতো, এখন দ্রুত তোমার চিকিৎসার মাধ্যমে এ টিউমার নিরাময় করা সম্ভব হবে”। 

টিউমার এর কথা শুনতে পেয়ে এরিকের মনের মধ্যে ভয় লেগে গিয়েছিলো কিন্তু পরে বুঝতে পারলো তার জীবনে যা হয়েছে আসলে ভালোর জন্যই হয়েছে। যদিনা সে নোভাকে হারাতো, ভেনেসার সাথে দেখা হতো এবং তার এ দূর্ঘটনা না ঘটতো হয়তো সে শীগ্রই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতো। এখন এরিক বুঝতে পারলো তার জীবনে যা ঘটেছে সব ই আসলে ভালোর জন্য।

আমাদের জীবনেও এমনটা হয়ে থাকে জীবনে ছোটখাটো না পাওয়া, জীবনের দূর্ঘটনা গুলো আমাদের মনে  হতাশার তৈরি করে।

জীবনে এক ধাপে হোঁচট খাওয়ার ফল হতে পারে ভুল দিকে পা বাড়ানো। হোঁচট খাওয়ার পর দুনিয়ার সবকিছু আমাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে থাকে। যেকোনো বিপদে অধৈর্য্য হয়ে আমরা বলি “এমনটা, আমার সাথেই কেনো হয়?” 

আমরা এরিক ও নোভা এর ঘটনার দিকে লক্ষ করি, এরিক নোভাকে হারিয়ে হতাশ হয়ে যায় কিন্তু পরে ভেনেসার সাথে পরিচয় হওয়ায় বুঝতে পারে যে, এটি তার ভুল ধারণা নোভাকে হারানো আসলে তার জন্য সুফল বয়ে এনেছে। পরবর্তীতে যখন দূর্ঘটনার শিকার হয় তখনও এরিক মনে মনে ভাবতে থাকে নোভাকে হারানোর কারণেই আজ তার এ অবস্থা। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে সে বুঝতে পারে যে এটিও আসলে তার ভালোর জন্যই হয়েছে।

আমাদের জীবনেও দেখা যায় আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাকে আমরা অন্য এক ঘটনার সাথে জুড়ে দিই। যেমন- আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, হয়তো ট্রাফিক জ্যাম এর কারণে আপনি ৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছেছেন। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর দেখলেন আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়নি। এবার কেউ জিজ্ঞেস করলেই আপনি তাকে বলছেন, “আসলে আমি ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম ছিলো, যার কারণে হলে দেড়িতে পৌঁছায় এবং তাই ফুল আনসার করতে পারিনি, ভাগ্যটাই খারাপ! তাই চান্স মিস”।

অন্য একটি উদাহরণ যদি দেখি, পারভিনের খুব ইচ্ছা জাগলো সে আইসক্রিম খাবে আর তাই সে তার স্বামী ফারুককে বললো সে আইসক্রিম খাবে এবং এখনই যেন সে তার জন্য আইসক্রিম কিনে আনে। ফারুক ও তার স্ত্রী-এর ইচ্ছা পূরণের জন্য আইসক্রিম কিনতে গেলো এবং আসার সময় এক বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে সে নিজে দূর্ঘটনার শিকার হলো এবং দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। এ ঘটনার পর পারভিন নিজেকে দোষ দেওয়া শুরু করলো। সে ভাবতে লাগলো যদি সে আইসক্রিম খাওয়ার বায়না না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। কিন্তু যদি ফারুক এর জায়গায় সে বাচ্চাটির এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো হয়তো বাচ্চাটি আজ আর দুনিয়াতে বেঁচে থাকতো না, হয়তো তার পরিবারকে বাচ্চার চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হতে হতো। যেখানে ফারুকের তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। 

একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন আমাদের  জীবনে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যে সময়ে হয়তো আমরা হতাশ হয়েছি, এরিকের মতো এক ঘটনার সাথে অন্য ঘটনা বা অন্য কোনো মানুষকে জুড়ে দিয়েছি। মানুষের জীবনের কোনো এক খারাপ সময়ের সাথে মানুষ তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্য এক ঘটনাকে জুড়ে দেওয়ার এ বিষয়টাকে বলা হয় “নোভা ইফেক্ট”। এ ধারণার সূত্রপাত নোভা ও এরিকের এ গল্প থেকে এসেছে। 

বর্তমান প্রেক্ষিতে যদি বলি, এ করোনাকালীন সময়ে হয়তোবা সবাই ভয়ের মধ্যে আছি, বাসায় আছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। যদিওবা করোনা পরিস্থিতি কারও জন্য সুফল বয়ে আনেনি কিন্তু একটু ভেবে দেখুন না করোনা পরিস্থিতি হয়তো নতুন প্রজন্মকে ভালো কিছু শিখিয়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে হাত-মুখ ধোঁয়া, হাত না ধুয়ে কোনো কিছু না খাওয়া, বাইরে মাস্ক ব্যবহার করে চলার অভ্যাস গুলো গড়ে দিয়েছে করোনা। এখন অনেকে হয়তো মনে মনে ভাবছেন হাত না ধুঁয়ে আমি কখনও কিছু খাইনি কিন্তু আপনার মতো কয়জন আছে যারা যেকোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে হাত ধুঁয়ে খাবার খায়। শুধু এটি নয় করোনা পরিস্থিতি আমাদের পৃথিবীকে দূষণমুক্ত রাখার উপায় জানিয়ে গিয়েছে, দেখিয়ে দিয়েছে দূষণবিহীন পরিবেশ কতো সুন্দর, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আবারও ডলফিনের আনাগুনা কতই না সুন্দর। এ করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে ভাবছেন করোনা পরিস্থিতির কারণে আপনার আজ এ অবস্থা কিন্তু একটু পজিটিভ চিন্তা করলে হয়তো করোনা পরিস্থিতি আমাদের সংগ্রাম করতে শিখিয়ে যাচ্ছে।  

পরিশেষে এরিকের এ গল্পের সারমর্ম হলো কখনও আপনার সাথে ঘটে যাওয়া কোনো খারাপ সময়ে আফসোস না করে, হতাশ না হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, হয়তো আজকের এ খারাপ সময় আপনার জন্য বয়ে আনবে সুফল। হয়তো এরিকের মতো আপনিও বলবেন, আসলেই যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আপনার আজকের হেড়ে যাওয়া হয়তো নতুন দিনের অনুপ্রেরণা। আমাদের সবসময় পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা রাখা উচিৎ, এখন হয়তো আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটলো হতে পারে এ ঘটনা ভবিষ্যতের আমার বিশাল ক্ষতির জানান দিবে। তাই সবসময় মাথায় রাখা উচিৎ “যা হয়েছে ভালোই হয়েছে”।

Always Think Positive.

Reference:

https://productiveclub.com/nova-effect/

লেখকঃ জেরিন সুলতানা শাওন 

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ,১ম বর্ষ,

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

Share:

Facebook
LinkedIn
WhatsApp

Responses

Social Media

Most Popular

Get The Latest Updates

আমাদের জনপ্রিয় কোর্স সমূহ

On Key

Related Posts

Data Control

Your Data Protection Rights Depending on your location, you may have the following rights regarding your personal data: To exercise these rights, please contact us

Privacy Policy

Last updated: 26/05/2024 Introduction Unique Schooling (“we”, “our”, “us”) is committed to protecting and respecting your privacy. This Privacy Policy explains how we collect, use,

Why Fourier Transform?

Ever heard that shhhhhh……… sound most often from mic? Disturbing enough? What’s that? Let’s Decode! When we speak the signal practically looks kind of like