বাংলাদেশে এলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট কানেকশন!

সম্প্রতি Starlink বাংলাদেশ থেকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিসেবার জন্য প্রি অর্ডার নেওয়া শুরু করে ।

সেবা প্রত্যাশাকারী তাদের ওয়েবসাইটে যেয়ে ৯৯ ডলার প্রদান করে প্রি অর্ডার করতে পারে এবং পরবর্তীতে আরো ৪৯৯ ডলার প্রদান করে স্টারলিংক হতে স্যাটেলাইট ডিস অর্ডার ও রাউটার ক্রয় করতে হবে ।

Image Source: Starlink Website

তবে এই সেবা পেতে গ্রাহকদের 2023 সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । কারণ এখনও বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে এই সেবা প্রদান করার জন্য পর্যাপ্ত স্যাটেলাইট Starlink উৎক্ষেপণ করতে পারেনি ।Starlink হলো SpaceX এর একটি বিভাগ যার উদ্দেশ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর সব অঞ্চলে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা । ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে Redmond, Washington SpaceX এর স্যাটেলাইট ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটি খোলার সময় স্টারলিংক সম্পর্কে ইলন মাস্ক  ঘোষণা করেছিলেন ।

এ সেবা প্রদানের জন্য SpaceX আগামী কয়েক দশকের মধ্যে প্রায় 42000 স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে । এখনো পর্যন্ত 2300 এরও বেশি স্যাটেলাইট পৃথিবীর মধ্যে উৎক্ষেপন করা হয় এবং প্রতিনিয়ত SpaceX এই লক্ষ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে চলেছে ।

এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষ পথে অবস্থান করবে । স্যাটেলাইট গুলো ভূমি হতে ২০০ থেকে ৪০০ মাইল  দূরে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে

এত কম দূরত্বে স্যাটেলাইট থাকার ফলে বেশি Bandwidth এবং কম Latency  ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে ।

Starlink  এর ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাবে যা সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।

Starlink Sattellite

Image Source: Starlink Website

বাংলাদেশে আসলে স্টারলিং আসলে কি কি সুবিধা ও অসুবিধা পাবে

সুবিধাসমূহ

• হাই-স্পিড Starlink স্যাটেলাইট

Starlink যখন ব্যবহার করা হয় তখন মাটি থেকে মাত্র 550 কিমি উপরে থাকে। সুতরাং, একটি Starlink ডিশ থেকে একটি Starlink স্যাটেলাইটে একটি ইন্টারনেট সংকেত 550 কিমি 550 কিমি ভ্রমণ করে, যা 1100 কিমি পর্যন্ত যোগ করে।

যেখানে 1100km কে 300000km/s দ্বারা ভাগ করলে 3.67ms হয়। বিলম্ব 3.67 ms, কিন্তু বাস্তব জীবনে, সিস্টেমের অন্যান্য অংশে বিলম্বের কারণে এটি 20 থেকে 30 ms পর্যন্ত হতে পারে। Starlink ইন্টারনেট অন্যান্য ধরনের ইন্টারনেট যেমন স্যাটেলাইট এবং তারের চেয়ে দ্রুততর।

• Starlink সস্তায় ইন্টারনেট প্রদান করতে পারে
গ্রামীণ এবং শহরতলির এলাকায়, স্টারলিংক কেবল এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের চেয়ে কম খরচে ইন্টারনেট অফার করতে পারে। অনেক জায়গায়, গ্রামীণ লোকেরা শহরের লোকদের মতোই অর্থ প্রদান করে, তবে তাদের ইন্টারনেট এত দ্রুত গতির হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, শহরের লোকেরা, কখনও কখনও ৩০-৪০ Mbps  ইন্টারনেটের জন্য 1000-1500 টাকার মতো অর্থ প্রদান করে । গ্রামীণ এলাকার মানুষকে এখনও 1Mbps  ইন্টারনেটের জন্য 1000-1200 টাকা এর বেশি দিতে হয়। অন্যদিকে, Starlink এর 50-150 Mbps এর  দাম মাত্র $99 বা প্রায় ৯০০০ টাকা (যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা বেশি খরুচে কিন্তু স্পিড  এর তুলনায় টাকার পরিমাণ যথেষ্ট।

•  Starlink ডিভাইসটি সেট আপ করা সহজ

Starlink ডিশ সেট আপ করা খুবই সহজ। একবার আপনার অর্ডার নিশ্চিত হয়ে গেলে, SpaceX আপনাকে একটি প্লেট, ওয়াইফাই রাউটার, (ঐচ্ছিক) মাউন্টিং বন্ধনী এবং আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত তার সহ একটি Starlink প্যাকেজ পাঠাবে। – এসব রাখার জন্য কোনো বিশেষ দক্ষতা বা জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।

শুধু এমন একটি জায়গা খুঁজুন যেখানে আপনি আকাশ ভালোভাবে দেখতে পারবেন। মাউন্টিং ব্র্যাকেটটি জায়গায় রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে Starlink প্লেটটি সামনে রয়েছে। চালু করা হলে, প্লেট বা ডিশটি এমনভাবে সরে যায় যাতে এটি সর্বোত্তম সংকেত পায়। সেটআপ করা এর থেকে আরও সহজ হতে পারে না।

Image Source: Starlink Website

অসুবিধাসমূহ

•  শহরগুলিতে ধীর ইন্টারনেট সংযোগ

স্টারলিংক একটি বড় উপায়ে কেবল ইন্টারনেটের মতো ভাল নয়। Starlink সবসময় একই সময়ে একই স্থানে একই সংখ্যক উপগ্রহ থাকে। এক জায়গায় সমস্ত ব্যবহারকারী একই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে।

তাই একই ব্যান্ডউইথ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে বেশি মানুষ ব্যবহার করে। এই কারণে, স্টারলিংকের গতি গ্রামের তুলনায় শহরগুলিতে ধীর হয় ।

• হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশন সমস্যা

হার্ডওয়্যার ইনস্টল করা অনেক ব্যবহারকারীর জন্য কঠিন হতে পারে। কেবল বা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অফার করে এমন প্রায় সব কোম্পানিই যন্ত্রপাতি ইনস্টল করে। কিন্তু Starlink এই ধরনের সরঞ্জাম ইনস্টলেশন অফার করে না।

উচ্চ ভবনে থাকে এমন গ্রাহকের স্যাটেলাইট ডিস স্থাপন করা কঠিন হতে পারে। আপনি কোথায় থাকেন তার উপর নির্ভর করে, আপনাকে আপনার ছাদে সরঞ্জাম রাখার প্রয়োজন হতে পারে।

শহরে, আপনি যদি ভাড়া নেন তাহলে আপনার বাড়িওয়ালা আপনাকে এসব সরঞ্জামাদি রাখতে নাও দিতে পারে।

• এটি সম্পূর্ণরূপে বহনযোগ্য নয়

সেল ইন্টারনেটের বিপরীতে, Starlink কোথাও নেওয়া যাবে না। আমরা আমাদের সেল ফোন দিয়ে যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেটে পেতে পারি।

• আবহাওয়ার অবস্থা ইন্টারনেট সংযোগকে প্রভাবিত করতে পারে

যখন বৃষ্টি হয়, বজ্রপাত হয় বা সৌর ঝড় হয়, স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রায়ই ভেঙ্গে যায়।

•  নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ব্যয়বহুল

 স্টারলিন্ক এর সংযোগ নিতে প্রথমেই প্রায় 45 হাজার টাকা প্রদান করতে হবে স্টারলিনক কিট কিনতে  এবং প্রত্যেক মাসে ইন্টারনেট সেবার জন্য প্রায় 9000 টাকা দিতে হবে যা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি । এত সামর্থ্য বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই নেই নেই।

কেন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রয়োজনীয়? ফাইবার ইন্টারনেট এর থেকে দ্রুত নয় কি?

ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট উল্লেখযোগ্যভাবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট তুলনায় বেশি দ্রুত গতির কিন্তু ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল কোন একটি অঞ্চলে স্থাপন করার জন্য স্থাপন করা একটি ধীর প্রক্রিয়া । আবার যদি অঞ্চলটি কোন দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হয় তাহলে তা আরো কঠিন হয়ে যায় । কিন্তু মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সহজ যদিও সেটা একটু ব্যয়বহুল । তাই ধারণা করা হয় Starlink পৃথিবীর বেশিরভাগ অনুন্নত সম্প্রদায়ের কাছে বেশি পৌঁছাবে বিশেষ করে সেসব অঞ্চল যেখানে ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া খুবই দুরূহ ।

লেখকঃ শিহাবুল ইসলাম জিসান

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Share:

Facebook
LinkedIn
WhatsApp

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

On Key

Related Posts

Writing Research Paper With Latex

Why to use LaTeX?

Making the one around you use LaTex or convince a colleague to move where you can write up your whole document in word is a

Total Differentiation explained in bangla.

TOTAL DIFFERENTIATION শব্দটি প্রথম শোনার পর মনে হতে পারে অনেক জটিল কিছু।আজকে আমরা বিষয়টিকে খুবি সহজভাবে বুঝার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।Total Differentiation কে আমরা দুইভাগে আলোচনা

মার্কেটিং এর শুরুতে ‘ঠিক বেঠিক মার্কেটিং’

বইঃ ঠিক বেঠিক মার্কেটিং লেখকঃ গালিব বিন মোহাম্মদ  প্রকাশনীঃ আদর্শ রেটিংঃ৮/১০ আপনিও যদি মার্কেটিং জগতে নতুন প্রবেশ করতে চান তাহলে “ঠিক বেঠিক মার্কেটিং” বইটি আপনার