গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাংকিং (GFP) ২০২২ অনুসারে সামরিক দিক থেকে ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬।
যদি এই GFP র্যাংকিংয়ে অস্ত্রের কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ান্টিটিকেই ফোকাস করে তাই ক্ষেত্রবিশেষে র্যাংকিংগুলো বিতর্কিত। তবে এখানে শুধু অস্ত্রের সংখ্যা কিংবা মান বিচার করেনা, সেই সাথে প্রতি বছরের ডিফেন্স বাজেট, ম্যান পাওয়ার, রিজার্ভ, যোগাযোগ ব্যবস্থার সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।
সামরিক সক্ষমতার মধ্যে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য আছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার। রিজার্ভ সদস্য নিয়ে বিতর্ক আছে তবে এই র্যাংকিংয়ে রিজার্ভ পার্সোনাল নেই দেখানো হয়েছে।
সংখ্যা বিবেচনায় গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে অবস্থান ১৪২টি দেশের মধ্যে ২৬ তম। তবে বাংলাদেশের আনসার, পুলিশ, বিজিবি সহ যেসকল প্যারামিলিটারী ফোর্স আছে তাদের সংখ্যা ৬৮ লক্ষ যা কিনা বিশ্বে এক দেশ হিসেবে সংখ্যায় সর্বোচ্চ এবং সুপারপাওয়ারদের পেছনে ফেলে ১৪২টি দেশের মধ্যে র্যাংকিংয়ে ১ নং এ!
এবার আসা যাক অস্ত্রশস্ত্রের দিকে।
শুরুতেই পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে।
ল্যান্ডফোর্সের মধ্যে বাংলাদেশের বহরে ট্যাংক আছে ৩২০টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৪৬তম/১৪২, GFP তথ্য অনুসারে যার সংখ্যা গতবছরও ছিলো ৬২০টি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্ভবত পুরাতন ট্যাংক ফ্লিটগুলো অবসরে পাঠিয়েছে। তবে এর মধ্যে চীন থেকে এক রেজিমেন্ট ভিটি-৫ লাইট ট্যাংক ডেলিভারী পেয়েছে বাংলাদেশ। সামনে আরো পাবে, সম্ভবত এর সংখ্যাটি GFP র্যাংকে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
আর্মর্ড ভেহিকল আছে বাংলাদেশের ৮৩৭ টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৬৫তম /১৪২, যার সংখ্যা গতবছর দেখানো হয়েছিলো ২০০০টি!
সেল্ফ প্রোপেল্ড আর্টিলারি তথা স্বয়ংক্রিয় কামান আছে ২৭টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৬০ তম।
টাউড আর্টিলারি আছে ৩৭১ টি যার সংখ্যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৩২ তম।রকেট প্রজেক্ট আছে ৬৯টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৪৩ তম। গতবছর এর সংখ্যা ছিলো ৭২ টি। তবে তুরস্ক থেকে T-300 Kasirga / টাইগার মিসাইল এবং TRG-230 মিসাইল ডেলিভারি পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যা দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে দূরপাল্লার রকেট আর্টিলারি (১২০ কিঃমিঃ)।
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে আছে চীন নির্মিত ১৫ কিঃমিঃ শর্ট রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। সামনে মিডিয়াম রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বহরে যুক্ত হবার কথা রয়েছে।
নৌবাহিনী :
বিশ্বের সব দেশে সীমানায় সমুদ্র উপকূল না থাকায় অনেকদেশের-ই নৌবাহিনী তুলনামূলক দূর্বল। কিন্তু বাংলাদেশের জলসীমা বিশাল।বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মোট যুদ্ধযান আছে ১১২টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ২৯ তম।তার মধ্যে ফ্রিগেট আছে ৭টি যার র্যাংকিংয়ে ১০ম।
কর্ভেট আছে ৬টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ১০ম।নৌবাহিনীর সবচেয়ে ক্রশাল সমরাস্ত্র সাবমেরিন আছে ২টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ১৯ তম।পেট্রল ভেসেল আছে ৩০টি যা গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ৩০ তম।মাইন ওয়ারফেয়ার আছে ৫টি যা বিশ্বে ১৭ তম।
বিমানবাহিনী :
বর্তমানে একটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সামরিক শক্তির মাপকাঠির অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে শক্তিশালী বিমানবাহিনী থাকা।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট এয়ারক্রাফট আছে ১৯০টি যার অবস্থান বিশ্বে ৪৭ তম।এর মধ্যে ফাইটার জেট আছে ৪৪ টি যার মধ্যে ৩৬টি-ই হলো ৩য় প্রজন্মের চীনা F-7 যেখানে কিনা অনেক দেশ-ই ৫ম প্রজন্মের ফাইটার জেট তাদের বহরে ব্যবহার করে ৬ষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নির্মাণে গবেষণা করে আসছে।
২০১৭ সাল থেকে ৪র্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যুক্ত হবার কথা শুনা গেলেও এখনো তেমন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় শীঘ্রই নতুন মাল্টিরোল ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি হতে যাচ্ছে।ফাইটারের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অবস্থান ৩৮ তম।
রাশিয়ার তৈরি ৮টি Mig-29 বিমান আছে যা বাংলাদেশের বহরে থাকা বিমানগুলোর মধ্যে সর্বাধুনিক ফাইটার জেট।সামরিক পরিবহন বিমান আছে ১৩ টি যার অবস্থান বিশ্বে ৩৮ তম।ট্রেইনার এয়ারক্রাফট আছে ৬৩টি যার অবস্থান বিশ্বে ৪০ তম।স্পেশাল মিশন পরিচালনা করার মতো বিমান আছে ২ টি যার বিশ্বে অবস্থান ৩০ তম।হেলিকপ্টার আছে ৬৬টি যার অবস্থান বিশ্বে ৪৯ তম। কোনো এটাক হেলিকপ্টার না থাকলেও শীঘ্রই যুক্ত হবার কথা রয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী আরো অনেক ধরনের অস্ত্র হালকা সমরাস্ত্র ব্যবহার করে থাকে যা সব একসাথে তুলে আনা সম্ভব নয়। আর লিথাল সমরাস্ত্রগুলো নিরাপত্তার খাতিরে অনেক সময় সামনে আনা হয়না। বাংলাদেশ ও হয়তো এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।
আশা করবো বাংলাদেশ সামরিক দিক থেকে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
Ref:
Responses