সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা না হলে দিনের শুরুটা পানসা হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ছাদে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা আর পড়ন্ত বিকাল কার না ভালো লাগে। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আর কিছু খাই বা না খাই, চা না খেলে যেনো আড্ডার পূর্ণতা পায় না। বৃষ্টির দিনে খুব কাছের মানুষটাকে নিয়ে চা খেতে খেতে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করার চেয়ে রোমান্টিক আর কি হতে পারে ! গরম গরম এক কাপ চা-ই যেনো আপনার ক্লান্তি ভুলিয়ে আবার সজাগ দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার উপায় করে দেয়।
বর্ষা ও চা
Image Credit : Jagonews24
রং চা, দুধ চা, মাল্টা চা, মালাই চা আরও কত ধরনের চা-ই না পাওয়া যায়। আপনি যে সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত মোটকথা পুরো দিনটাকেই চা-এর ওপর চালাচ্ছেন জানেন কী এ চা তৈরির প্রধান উপাদান কি? অথবা এ চা তৈরির কারিগর কারা?
চা তৈরির প্রধান উপাদান চা-পাতা। এ চা-পাতার উৎস কোথায়? আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চা পাতা এর উৎপাদন হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল এর কথা না বললেই নয়। চা-এর জন্য বিখ্যাত এ শ্রীমঙ্গল এর কথা সবাই হয়ত শুনেছেন। আজ আমরা শ্রীমঙ্গল সম্পর্কে ভিতর থেকে দেখার চেষ্টা করবো।
শ্রীমঙ্গল (চা বাগান)
Image Credit : Vromonguide.com
প্রথমে চা-এর কথায় আশা যাক। সাধারণত মে মাস থেকে চা পাতা সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয় এবং তা চলতে থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময়ে চা বাগানগুলো থাকে সবুজে সতেজ। আর চা-শ্রমিকরা থাকে কর্মব্যস্থ। তাই এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ সময় অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল শহরটি ছোট হলেও খুব গুছানো। শহরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে চা বাগান। যেদিকে তাকানো হোক না কেনো সবুজে ঘেরা চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই।
তারপর লক্ষ্য করা যাক এ চা-শ্রমিকদের নিয়ে নির্মিত একটি ভাষ্কর্য এর দিকে। বাগানে চা-পাতা তুলছে এক তরুণী শ্রমিক এমন একটি ভাস্কর্য। আপনারা অনেকে হয়তো বুজতে পেরেছেন ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্যটির কথা বলছি।
চা-কন্যা ভাস্কর্য
Image Credit : Jatiyonews24.com
চা বাগান দেখা শেষ হলেই আপনি যেতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার পথে আপনার চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে সারি সারি আনারস বাগান। শ্রীমঙ্গলের সুমিষ্ট আনারসের বাগানের সৌন্দর্য কিন্তু চা বাগানের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। দেশখ্যাত এ আনারসের স্বাদ অন্য যে কোনো জায়গার আনারসের চেয়ে ভালো। পাহাড়ের টিলায় সাজানো আনারসের মায়াবী রূপ যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে ঠিক তেমনই পাকা আনারসের সুমিষ্ট গন্ধ আপনাকে মোহিত করবে।
আনারস বাগান
Image Credit : Facebook
আনারস দেখতে দেখতে পৌছে যাবেন ট্রপিক্যাল ফরেস্ট নামে খ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটিতে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং পশুপাখি দর্শনের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। বৃসারির মগডালে বানর আর হনুমানের লাফালাফি এবং ঝাঁকঝাঁক উল্লুকের ডাকাডাকি কিছু সময়ের জন্য আপনাকে দিতে পারে অন্য রকমের অনুভূতি। একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বনমোরগ, মেছোবাগ, বনবিড়াল, খাটাস সহ বিভিন্ন জীবজন্তু আর ঝিঁঝি পোকার শব্দ। বিশাল বৃরাজি বা জীবজন্তুর হুঙ্কার এমনই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যে, আপনাকে একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি দিবে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
Image Credit : bangladesh.gov.bd
এবার আসা যাক শ্রীমঙ্গলের সবচাইতে আকর্ষনীয় জিনিস ‘সাত রঙের চা’-তে। বেড়ানোর ফাঁকে এক কাপ চা যেনো চা প্রেমীদের জন্য অমৃত। আর তা যদি হয় সাত রঙ্গের চা তাহলে তো কথায় নেই। আলোড়ন সৃষ্টিকারী রমেশের চা না খেলে যেন শ্রীমঙ্গল বেড়ানোর আনন্দই অসম্পূর্ণ। আর এ বিখ্যাত সাত রঙা চা উদ্ভাবন করেছেন রমেশ রাম। একই পাত্রে ১০লেয়ারের চা আবিষ্কারের কৌশল আয়ত্ব করেছেন রমেশ রাম।
সাত রঙা চা
Image Credit : Vromoninfo
সাত রঙের চা খেতে খেতে চোখে পরে যাবে শ্রীমঙ্গল এর চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাসিয়াদের পানের পুঞ্জি। পাহাড়ের উঁচুটিলায়, টিলার পর টিলা যতদূর পর্যন্ত চোখ যায় শুধুই পান গাছের সারি চোখে পড়বে। মূলত খাসিয়াদের মধ্যে পান ও সুপারি খাওয়ার প্রচলন বেশি আর সে জন্য তারা এ অঞ্চলে সারি সারি পানের চাষ করে।
পান গাছ
Image Credit : Vromoninfo
এক লেখায় শ্রীমঙ্গল নিয়ে লেখা সম্ভব নয়। শ্রীমঙ্গলে আরো পর্যটন স্পোট রয়েছে যেমন- মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত। অন্য আরেক লেখায় এ স্থানগুলো নিয়ে কথা হবে। শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করার মাধ্যমে মনের বিষন্নতাকে দূর করে নতুনভাবে পথ চলতে অনুপ্রাণিত হবেন।
লেখকঃ জেরিন সুলতানা শাওন
Reference :
[1] Porjotonlipi.com
[2] VromonInfo
Responses